সোমবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০১:০১ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক: জুলাই জজবার প্রাণ, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার অকুতোভয় বীর শহীদ শরিফ ওসমান হাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রী মসজিদের প্রাঙ্গণে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন। শনিবার (২০ ডিসেম্বর) তিনটার দিকে তার দাফন সম্পন্ন হয়।
ইনকিলাব মঞ্চ জানিয়েছে, পরিবারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ওসমান হাদিকে কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে।
ওসমান হাদির জানাজার নামাজ জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় সম্পন্ন হয়েছে। জানাজায় সংসদ ভবন এলাকাসহ আশে পাশে মানুষের জনস্রোত নেমে আসে।
এর আগে দুপুর আড়াটার দিকে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় লাখো জনতার অংশগ্রহণে বড় ভাই আবু বকর সিদ্দিকের ইমামতিতে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত। জানাজা শেষে ওসমান হাদিকে দাফন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় প্রাঙ্গণে।
শহিদ ওসমান হাদির নামাজের জানাজায় অংশনেন উপধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, উপদেষ্টা পরিষদ, তিন বাহিনীর প্রধানসহ রাজনৈতিক নেতারা।
ওসমান হাদির জানাজার আগে প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, ওসমান হাদি তুমি নির্বাচনে অংশ নিতে চেয়েছিলে। নির্বাচন কীভাবে করতে হয় তারও একটা প্রক্রিয়া জানিয়ে গেছ। তিনি বলেন, নির্বাচনের যে পক্রিয়া হাদি শিখিয়ে গেছেন সেই প্রক্রিয়া যেন আমরা সবাই মিলে গ্রহণ করি। কীভাবে প্রচারণা চালাতে হয়, কীভাবে মানুষের কাছে যেতে হয়- তুমি সবকিছুর শিক্ষা দিয়ে গেছ। আমরা এই শিক্ষা গ্রহণ করলাম।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘হাদি কোথাও হারিয়ে যাবে না। কোনোদিন তোমাকে কেউ ভুলতে পারবে না। তোমাকে আমাদের সবার পক্ষ থেকে আল্লাহর কাছে আমানত রাখলাম। আমরা সবসময় তোমার কথা রেখে জাতির অগ্রগতির পথে চলতে থাকবো।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আজ লাখ লাখ মানুষ হাজির হয়েছেন। পথে ঢেউয়ের মতো লোক আসছে। এই মুহূর্তে কোটি কেটি মানুষের চোখ এখানে। তারা তাকিয়ে রয়েছে হাদির বিষয়ে জানার জন্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রিয় ওসমান হাদি তোমাকে আমরা বিদায় দিতে আসি নাই এখানে। তুমি আমাদের বুকের ভেতরে আছো। বাংলাদেশ যতদিন আছে, ততদিন তুমি সব বাংলাদেশির বুকে থাকবে। এটা কেউ সরাতে পারবে না।’
হাদির কাছে ওয়াদা করতে এসেছেন জানিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘তুমি যা বলে গেছ, সেটা যেন আমরা পূরণ করতে পারি। সে ওয়াদা করার জন্য আমরা একত্রিত হয়েছে। সেই ওয়াদা শুধু আমরা নয়, পুরুষানুক্রমে দেশের সব মানুষ পূরণ করবে। তোমার যে মানব প্রেম তোমার যে ভঙ্গি, তোমার যে ওঠাবসা এবং রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, তা নিয়ে সবাই প্রশংসা করছে। সেটা যেন আমাদের মনে সবসময় জাগ্রত থাকে।’
শহিদ হাদি কানে এমন এক মন্ত্র দিয়ে গেছে, সেটা বাংলাদেশের কেউ কোনোদিন ভুলতে পারবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চিরদিন আমাদের কানের পাশে বাজবে তোমার সেই মন্ত্র। বড় মন্ত্র হয়ে আমাদের জাতির সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। আমরা দুনিয়ায় সবার সামনে মাথা উঁচু করে চলবো, কারো কাছে মাথানত করবো না। সেই মন্ত্র তুমি আমাদের দিয়ে গেছ, আমরা সেটা পূরণ করে যাবো।’
জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে গোসল শেষে শনিবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুর সোয়া ১টার দিকে তার মরদেহ জানাজার উদ্দেশে সংসদ প্লাজায় নেওয়া হয়। জানাজার নামাজে খামারবাড়ি থেকে আসাদ গেট পর্যন্ত পুরো এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছিল। এর আগে সকালে ময়নাতদন্তের জন্য তার মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে গোসলের জন্য জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়।
এদিন ভোর থেকেই হাদিকে শেষবারের মতো দেখতে হাসপাতালের সামনে দূরদূরান্ত থেকে মানুষ জড়ো হতে থাকেন।
ওসমান হাদির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে আজ (শনিবার) দেশে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন করা হচ্ছে। সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি ও বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুতে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) দুপুরে দুর্বৃত্তের গুলিতে গুরুতর আহত হন ওসমান হাদি। প্রথমে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার অস্ত্রোপচার করা হয়। পরে পরিবারের সিদ্ধান্তে তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। উন্নত চিকিৎসার জন্য গত ১৫ ডিসেম্বর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি মারা যান।